সর্বশেষ

কোকেন বাণিজ্য

বাংলাদেশের ট্রানজিট রুটে পাচার অব্যাহত, আড়াল থেকে কলকাঠি নাড়ছে রাঘববোয়ালরা

প্রকাশিত: ৩০ অগাস্ট ২০২৫, ২১:৫২
বাংলাদেশের ট্রানজিট রুটে পাচার অব্যাহত, আড়াল থেকে কলকাঠি নাড়ছে রাঘববোয়ালরা

বাংলাদেশের ভূগোল ও অবস্থান আন্তর্জাতিক কোকেন পাচারের জন্য একটি সহজ ট্রানজিট রুট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। দেশটি দক্ষিণ আমেরিকা থেকে আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য এবং পরবর্তীতে ইউরোপ, ভারত ও উত্তর আমেরিকায় কোকেন পাচারের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। গত ১১ বছরে ৫০ কেজি কোকেন জব্দ হলেও, বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যাচ্ছে যে, এই রুটে পাচার হওয়া কোকেনের পরিমাণ অন্তত ১০ গুণ বেশি। তবে মাদক পাচারের সাথে জড়িত রাঘববোয়ালদের নাম এখনো অজানা থেকে গেছে, যার কারণে কোকেন মামলার ভবিষ্যত নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।

 

২০১৫ সালের ৬ জুন চট্টগ্রাম বন্দরে সূর্যমুখী তেলের চালানে কোকেন জব্দ হয়। শুল্ক গোয়েন্দা ও পুলিশের তদন্তে কোকেনের নমুনা শনাক্ত করা হয়। তবে মামলার তদন্তে গন্তব্য বের করা সম্ভব হয়নি। ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে র‌্যাব অভিযোগপত্র জমা দিলেও হাই কোর্ট ওই বছরের অক্টোবর মাসে মামলার বিচারিক কার্যক্রম স্থগিত করে।

 

একইভাবে, ২০১৩ সালে পেরুর নাগরিক জন পাভলো রাফায়েলকে ৩ কেজি কোকেনসহ গ্রেপ্তার করা হয়। তদন্তে বেরিয়ে আসে যে, তিনি বাংলাদেশে ‘ক্রস ওসান প্রা. লি.’ নামক একটি প্রতিষ্ঠানের আমন্ত্রণে এসেছিলেন। ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক মোস্তফা আশরাফ পরে জামিনে মুক্তি পেয়ে বিদেশে চলে যান।

 

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি) জানাচ্ছে, বাংলাদেশ ভৌগোলিক কারণে আন্তর্জাতিক কোকেন পাচার চক্রের জন্য সহজ ট্রানজিট রুট হয়ে উঠেছে। এখান থেকে কোকেন পাচার হয়ে চলে যায় ভারত, ইউরোপ এবং আমেরিকায়। তবে, মূল চক্রের শীর্ষ ব্যক্তিদের নাম ও অবস্থান চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি। ডিএনসি অনুসন্ধানে জানা গেছে, বাংলাদেশে কোকেন পাচারের প্রধান চক্রের নেতা হলেন ডন ফ্রাংকি, যিনি বাংলাদেশের পোশাক ব্যবসার আড়ালে দীর্ঘদিন কোকেন পাচারের কাজ চালিয়ে এসেছেন। যদিও তিনি দেশ ছাড়লেও এখন নাইজেরিয়ায় বসে মাদক পাচারের সমন্বয় করছেন।

 

ডিএনসি সূত্র জানায়, বাংলাদেশে কোকেনের বাজার না থাকলেও আন্তর্জাতিক চক্র দেশকে ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করছে। দক্ষিণ আমেরিকা থেকে কোকেনের প্রচলিত রুটে কঠোর তল্লাশি চালানোর পর, চক্রটি নতুন রুট খুঁজছে। বিমান ও স্থলপথে কোকেন পাচার অব্যাহত রয়েছে।

 

গত ২৬ আগস্ট হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ৮.৬৬ কেজি কোকেন জব্দ হয়। গ্রেপ্তারকৃত গায়ানার নাগরিক এম এস ক্যারেন পেতুলা স্টাফেনের কাছ থেকে কোনো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়নি। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাদের মতে, মামলার এজাহারে কিছু ত্রুটি রয়েছে, যা বিচারিক কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। আইনজীবী আলতাফ হোসাইন বলেন, "এজাহারের দুর্বলতা থাকলে মামলার ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয় এবং প্রকৃত আসামি পার পেয়ে যেতে পারে।"

 

ডিএনসি বলছে, বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মাদক চক্রের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ট্রানজিট রুট হয়ে উঠেছে এবং দেশের তরুণ সমাজের জন্য নতুন মাদক প্রবেশ করছে, যেমন খাত, আইস, পিল, ক্রিস্টাল, এমডিএমএ এবং অ্যামফিটামিন। এসব মাদক বিদেশ থেকে ভুয়া ঘোষণায় আসছে, যা তরুণদের জন্য বড় বিপদ।

সব খবর