লক্ষ্মীপুরে ভয়াবহ অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ঘুমন্ত অবস্থায় দগ্ধ হয়ে মারা গেছে সাত বছরের শিশু আয়েশা আক্তার। এ ঘটনায় গুরুতর দগ্ধ হয়েছেন তার বাবা বিএনপি নেতা মো. বেলাল হোসেন এবং তার আরও দুই কন্যা। গভীর রাতে পরিকল্পিতভাবে ঘরের দরজায় বাইরে থেকে তালা ঝুলিয়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে।
শুক্রবার গভীর রাতে সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নের চরমনসা এলাকায় এ মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, ওই রাতে বেলাল হোসেন স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন। রাতের কোনো এক সময় দুর্বৃত্তরা ঘরের দরজায় বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে ভেতরে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। মুহূর্তেই আগুন ছড়িয়ে পড়লে ঘুমন্ত অবস্থায় শিশু আয়েশা অগ্নিদগ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যায়।
আয়েশার মা নাজমা আক্তার কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার মেয়ের অনেক স্বপ্ন ছিল। সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আমি শুধু আমার মেয়ের হত্যাকারীদের বিচার চাই।’ হাসপাতালে করিডোরে বসে বারবার বিলাপ করতে দেখা যায় তাকে। শিশুটির মৃত্যুতে পরিবারে নেমে এসেছে শোকের মাতম।

নিহত আয়েশা স্থানীয় ফাইভ স্টার স্কুলের শিক্ষার্থী ছিল। তার বাবা মো. বেলাল হোসেন একজন ব্যবসায়ী এবং ভবানীগঞ্জ ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক। তিনি নিজেও দগ্ধ হয়ে সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তার বড় মেয়ে সালমা আক্তার (একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী) ও আরেক মেয়ে বিথি আক্তার গুরুতর দগ্ধ হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসা নিচ্ছেন। চিকিৎসকরা তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন।
স্থানীয়রা জানান, অগ্নিকাণ্ডে ঘরে থাকা নগদ টাকা, একটি মোটরসাইকেল এবং ব্যবসার মালামাল সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে। ঘটনার পর থেকে এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।
ভবানীগঞ্জ ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আজাদ হোসেন বলেন, ‘রাতের আঁধারে পরিকল্পিতভাবে এই অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’
লক্ষ্মীপুর ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার রনজিৎ কুমার দাস জানান, এক শিশু নিহত হয়েছে এবং তিনজনকে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্তাধীন।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ওয়াহিদ পারভেজ বলেন, পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। এটি পরিকল্পিত নাশকতা কি না, সে বিষয়ে তদন্ত চলছে।