সিলেট-ঢাকা রেলপথে যাতায়াতকারী যাত্রীদের কাছে পরিচিত এক অন্ধ বেহালাবাদক গত শুক্রবার পারাবত এক্সপ্রেস ট্রেনে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। শ্রীমঙ্গল থেকে শায়েস্তাগঞ্জ পর্যন্ত যাত্রীদের গান শোনানো এই শিল্পীকে প্রকাশ্যে গালাগাল, থাপ্পড় এবং গলা চেপে ধরার মতো ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, অভিযুক্ত ব্যক্তি ধর্মীয় যুক্তি দেখিয়ে বলেন—“গান গাওয়া হারাম”, তাই তিনি শিল্পীকে গান থামাতে বলেন। কিন্তু শিল্পী গান চালিয়ে গেলে তিনি প্রকাশ্যে লাঞ্ছনা শুরু করেন। যাত্রীদের অনেকেই প্রতিবাদ করলেও ভয়ে কেউ সামনে এগিয়ে আসেননি।
ভুক্তভোগী শিল্পী দীর্ঘদিন ধরে রেলপথে গান গেয়ে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। যাত্রীরা গান শুনে সাধ্যমতো অর্থ সহায়তা দিয়ে থাকেন, যা দিয়ে তাঁর সংসার চলে। কিন্তু শুক্রবারের ঘটনায় যাত্রীদের অনেকেই হতবাক হয়ে যান।
এই ঘটনার পর সামাজিক মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকেই। একজন যাত্রী লিখেছেন, “একজন প্রতিবন্ধী মানুষ গান গেয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন, অথচ তাঁকে ধর্মের নামে অপমান ও নির্যাতন করা হচ্ছে—এটা আমাদের সমাজের জন্য লজ্জাজনক।”
ধর্মীয় বিশ্লেষকরা বলছেন, ইসলামে গান নিয়ে মতভেদ রয়েছে, তবে কাউকে প্রকাশ্যে অপমান বা আঘাত করার অনুমতি নেই। একজন মানুষ যদি গান গেয়ে জীবিকা চালান, তাহলে তাঁর প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়াই মানবিক দায়িত্ব।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ভিডিওটি যাচাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ট্রেনে যাত্রীদের নিরাপত্তা ও সম্মান রক্ষায় কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব রয়েছে বলে তারা উল্লেখ করেছে।
এই ঘটনার মাধ্যমে প্রশ্ন উঠেছে—একজন অন্ধ শিল্পীর গান গাওয়ার স্বাধীনতা কি আজও নিরাপদ? সমাজে সহনশীলতা ও মানবিকতা কোথায় দাঁড়িয়ে আছে? যাত্রীদের অনেকেই বলছেন, “আপনার যা অপছন্দ, তা এড়িয়ে যেতে পারেন। কিন্তু কারও জীবিকার পথ রুদ্ধ করার অধিকার কারও নেই।”