সর্বশেষ

সাত দিনেও চালু হয়নি বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র, উত্তরবঙ্গে লোডশেডিংয়ে চরম ভোগান্তি

প্রকাশিত: ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ২১:০৬
সাত দিনেও চালু হয়নি বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র, উত্তরবঙ্গে লোডশেডিংয়ে চরম ভোগান্তি

দিনাজপুরের পার্বতীপুরে অবস্থিত কয়লাভিত্তিক বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র সাত দিন ধরে সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রয়েছে। ৫২৫ মেগাওয়াট উৎপাদনক্ষমতাসম্পন্ন এ কেন্দ্র বন্ধ থাকায় দিনাজপুরসহ উত্তরাঞ্চলের আট জেলার মানুষ বিদ্যুৎ-বিভ্রাট ও লো-ভোল্টেজের মারাত্মক ভোগান্তিতে পড়েছেন।

 

কেন্দ্রের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, প্রথম ইউনিটটি চালু করতে আরও এক সপ্তাহ সময় লাগবে। তবে ২৭৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার তৃতীয় ইউনিট চালু হতে আরও দীর্ঘ সময় লাগবে, কারণ তাতে যান্ত্রিক ত্রুটি ও সেন্সর সমস্যা রয়েছে। দ্বিতীয় ইউনিটটি ২০২০ সালের নভেম্বর থেকে সংস্কারের জন্য বন্ধ রয়েছে। প্রায় পাঁচ বছর ধরে সেটি চালু করা সম্ভব হয়নি।

 

তথ্য অনুযায়ী, গত ১৬ অক্টোবর তৃতীয় ইউনিটে টারবাইন নষ্ট হওয়ার পর উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। তিন দিন পর, ১৯ অক্টোবর, যান্ত্রিক ত্রুটিতে প্রথম ইউনিটও বন্ধ হয়ে পড়ে। ফলে কেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদন পুরোপুরি থেমে গেছে। বন্ধ হওয়ার আগে প্রথম ইউনিট থেকে ৫০–৫৫ মেগাওয়াট এবং তৃতীয় ইউনিট থেকে ১৬০–১৬৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ হতো।

 

২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এ কেন্দ্র প্রথমে দুটি ইউনিট নিয়ে চালু হয়, প্রতিটির উৎপাদনক্ষমতা ছিল ১২৫ মেগাওয়াট। ২০১৭ সালে আরও একটি ২৭৫ মেগাওয়াট ইউনিট যুক্ত হয়। তবে ঘোষিত ৫২৫ মেগাওয়াট উৎপাদন কখনোই অর্জিত হয়নি। যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে প্রায়ই কোনো না কোনো ইউনিট বন্ধ থাকত।

 

কেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, “প্রথম ইউনিটটি চালু করার কাজ চলছে, আরও এক সপ্তাহ লাগবে। তবে তৃতীয় ইউনিটের মেশিন পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করে চালু করা ঝুঁকিপূর্ণ। প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান হারবিন ইন্টারন্যাশনালের সঙ্গে যোগাযোগ চলছে।”


তিনি আরও জানান, দ্বিতীয় ইউনিট মেরামতের জন্য প্রতিষ্ঠানটি ২৩ মিলিয়ন ডলার চাচ্ছে, যা একসময় দুই ইউনিট নির্মাণের মোট ব্যয়েরও বেশি। ফলে সেটি চালুর বিষয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় আছে কর্তৃপক্ষ।

 

এদিকে কেন্দ্র বন্ধ থাকায় জাতীয় গ্রিড থেকে উত্তরাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ কমে গেছে। নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো) জানিয়েছে, পার্বতীপুর শহরে সাত মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে সর্বোচ্চ তিন মেগাওয়াট সরবরাহ মিলছে। প্রায় ২০ হাজার গ্রাহক প্রতিদিন অনিয়মিত বিদ্যুৎ সরবরাহের কারণে ক্ষুব্ধ।

 

স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, সকাল, ভোর কিংবা গভীর রাতে বিদ্যুৎ চলে যায়; ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে জীবনযাত্রা অস্বস্তিকর হয়ে উঠেছে। তীব্র গরমে (৩২–৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস) মানুষের ভোগান্তি আরও বেড়েছে।

 

লোডশেডিংয়ের প্রভাবে স্থানীয় কল-কারখানা, বিশেষ করে চালকলগুলোতে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। দিনাজপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক সহিদুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, “বিদ্যুৎকেন্দ্রটি এই অঞ্চলের কৃষি ও শিল্প উন্নয়নের ভিত্তি। দীর্ঘদিন ইউনিটগুলো বন্ধ থাকলে বোরো চাষ, চালকল উৎপাদন এবং স্থানীয় অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।”

 

কৃষকরাও একই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, আসন্ন শীত মৌসুমে সেচের জন্য বিদ্যুতের অভাব হলে সবজি ও বোরো উৎপাদনে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে। এতে খরচ বাড়বে, দামও বাড়বে।

 

বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি থেকে কয়লা সরবরাহ না কমলেও কেন্দ্রটি সচল রাখতে প্রতিদিন প্রায় পাঁচ হাজার টন কয়লা প্রয়োজন। বর্তমানে কয়লাখনির ইয়ার্ডে ৪ লাখ ৬০ হাজার টন কয়লা মজুত আছে। তবুও যান্ত্রিক ত্রুটি ও ব্যয়বহুল রক্ষণাবেক্ষণের কারণে কেন্দ্রটি চালু রাখতে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ।

 

উত্তরাঞ্চলের জনগণ ও ব্যবসায়ীরা দ্রুত তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের তিনটি ইউনিট পুনরায় চালুর দাবি জানিয়েছেন, যেন স্বাভাবিক বিদ্যুৎ সরবরাহ ফিরিয়ে এনে জনদুর্ভোগ ও শিল্পক্ষতির আশঙ্কা কমানো যায়।

সব খবর