অর্থনীতি যেন একটি বিশাল চাকা যা ঘুরে চলে উৎপাদন, বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান ও বাণিজ্যের শক্তিতে। সেই চাকার মূল চালিকাশক্তি হলো শিল্পকারখানা। শিল্প থেমে গেলে অর্থনীতির গতি থেমে যায় এ সত্য কারও অজানা নয়।
বাংলাদেশ একসময় শিল্পোন্নয়নের পথে শক্তপোক্ত অগ্রযাত্রা শুরু করেছিল। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে শিল্পবান্ধব নীতি গ্রহণ করেন, যা দেশের অর্থনীতিকে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দেয়। দেশের বিভিন্ন স্থানে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু হয়েছিল।
এই পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত ছিল বিদ্যুৎ উৎপাদনে আত্মনির্ভরতা অর্জন, গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ, সড়ক ও রেল যোগাযোগ ব্যবস্থার আধুনিকায়ন, এবং শিল্পের জন্য নিরবিচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ। এ এক স্বপ্নযাত্রা ছিল, যেখানে দেশীয় ও বৈদেশিক বিনিয়োগ একসাথে প্রবাহিত হচ্ছিল।
কিন্তু আজ সেই গতিময়তা স্তব্ধ হয়ে গেছে। অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোর উন্নয়ন থেমে আছে, বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত, গ্যাস সরবরাহ অনিশ্চিত, বন্দর নির্মাণ স্থগিত। বিনিয়োগকারীরা দ্বিধায় ভুগছেন, কেউ কেউ দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। ফলে শিল্প উৎপাদন কমে যাচ্ছে, কর্মসংস্থান সংকুচিত হচ্ছে, এবং অর্থনীতি স্থবিরতার দিকে ধাবিত হচ্ছে।
এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন এক সংকট শিল্পকারখানায় চাঁদাবাজি, ব্যবসায়ীদের হয়রানি, এবং দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার। রাজনৈতিক ট্যাগ লাগিয়ে অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অনিশ্চয়তা ও ভয়ের এই পরিবেশে হাজার হাজার কলকারখানা ইতিমধ্যেই বন্ধ, আরও বহু প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার পথে। এর ফলে লাখ লাখ শ্রমিক বেকার হয়ে দিশেহারা জীবনযাপন করছে।
শিল্প থামিয়ে দিয়ে অর্থনীতি বাঁচানো যায় না। বরং এর ফল হয় মারাত্মক কর্মসংস্থান ধ্বংস হয়, রপ্তানি আয় হ্রাস পায়, বৈদেশিক মুদ্রা সঙ্কট বাড়ে, দারিদ্র্যের হার বৃদ্ধি পায়, এবং সাধারণ মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়ে।
আজ বাংলাদেশ অর্থনৈতিক মন্দার কিনারায় দাঁড়িয়ে। অবৈধ সরকারের দমননীতি, আইনশৃঙ্খলার অবনতি এবং বিনিয়োগ অনুকূল পরিবেশ ধ্বংস সব মিলে দেশকে গভীর সংকটে ঠেলে দিয়েছে। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ হলো শিল্পোন্নয়নের ধারা পুনরায় সচল করা, বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করা এবং উৎপাদন খাতকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও দুর্নীতির হাত থেকে মুক্ত করা।