বেলজিয়াম সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশি নাগরিকরা আর ঢাকায় ভিসা পাবেন না। এখন থেকে আবেদন করতে হবে নয়াদিল্লির ভিএফএস সেন্টারে। এতদিন বেলজিয়ামের হয়ে সুইডেন দূতাবাস ভিসা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করত; তারাও দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়িয়েছে। প্রথম দেখায় এটি প্রশাসনিক পরিবর্তন মনে হলেও, আসলে এটি একটি স্পষ্ট রাজনৈতিক বার্তা—বাংলাদেশের বর্তমান শাসকের ওপর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আস্থা রাখে না।
অবস্থা আরও তাৎপর্যপূর্ণ হয় যখন স্মরণ করা যায়, মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগেও ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও তার ঘনিষ্ঠ মহল প্রচার চালিয়েছিল—“ইউরোপের সাতটি দেশ ঢাকায় নতুন দূতাবাস খুলতে যাচ্ছে। পশ্চিমা বিশ্ব ইউনুসের নেতৃত্বে আস্থা রাখছে।” বাস্তবতা সম্পূর্ণ বিপরীত। শুধু বেলজিয়ামই নয়, আরও কিছু দেশ ধীরে ধীরে বাংলাদেশ থেকে কূটনৈতিক দূরত্ব তৈরি করছে—নীরবে, কিন্তু নির্মমভাবে।
নয়াদিল্লিকে বেছে নেওয়ার পেছনে একটি সূক্ষ্ম কৌশল লুকিয়ে আছে। ২০২৪ সালের জুলাই দাঙ্গার পর ভারত বাংলাদেশিদের ট্যুরিস্ট ভিসা দেওয়া বন্ধ করেছে। ফলে নয়াদিল্লিতে গিয়ে বেলজিয়ামের ভিসা প্রক্রিয়া করা কার্যত অসম্ভব। একধরনের কূটনৈতিক “ঢাল” ব্যবহার করে তারা মূলত বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য দরজা বন্ধই করে দিয়েছে।
এতে স্পষ্ট—আন্তর্জাতিক মহল ইউনূস সরকারকে কখনোই বৈধ নেতা হিসেবে দেখেনি। তারা তাকে একজন বিদেশি প্রজেক্ট ও এনজিও লবির প্রতিনিধি হিসেবে মনে করে—যার ওপর আস্থা রাখা যায় না, বিনিয়োগও ঝুঁকিপূর্ণ। বৈধতা ছাড়া রাষ্ট্রের কথাই বিশ্বাসযোগ্য হয় না। আজ বাংলাদেশ সেই অবস্থায় দাঁড়িয়েছে।
সবচেয়ে ক্ষতির সম্মুখীন হলো দেশের সাধারণ মানুষ। যারা পড়াশোনা, চিকিৎসা বা ব্যবসার জন্য ইউরোপ যেতে চান, তাদের অতিরিক্ত খরচ, সময় ও মানসিক চাপের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। একসময় মর্যাদার প্রতীক সবুজ পাসপোর্ট আজ বিব্রতকর পরিচয়ে পরিণত হয়েছে।
আজ বেলজিয়াম দরজা বন্ধ করেছে, কাল স্পেন করবে, পরশু হয়তো জার্মানি। এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়—ধারাবাহিক পতনের প্রক্রিয়া, যা শুরু হয়েছিল সেই দিন, যেদিন বিদেশি সমর্থনে একটি অবৈধ, অসাংবিধানিক নেতৃত্ব ক্ষমতা দখল করে বসেছিল।
যারা এখনও “ইউরোপে নতুন দূতাবাস খোলার” স্বপ্নে বিভোর, তাদের চোখ খোলা উচিত। বেলজিয়ামের এই পদক্ষেপ শুধু ভিসা প্রসেসিংয়ের পরিবর্তন নয় এটি বাংলাদেশের কূটনৈতিক মর্যাদাহানির নির্মম প্রমাণ, আর তার দায়ভার বহন করছে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ।