আমরা একজন প্রেস সচিবকে চিনি, যিনি ২০২৫ সালের জাতীয় বই মেলায় বিগত সরকারের প্রধানমন্ত্রীর ছবি ডাস্টবিনে ছাপিয়ে বেশ সমালোচিত হয়েছিলেন। যিনি পরিচয় লাভ করেছিলেন ‘ডাস্টবিন শফিক’ হিসেবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যা ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছে। যিনি আমাদের স্বাধীন বাংলাদেশে বসন্ত বিপ্লবের মাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে প্রধান উপদেষ্টা হয়েছেন, তিনি নোবেল লরিয়েট - সেই মহান নোবেল লরিয়েটের প্রেস সচিব শফিকুল ইসলাম বা ‘ডাস্টবিন শফিক’। তাকে আমরা চিনি।
তিনি এবং তার অন্তর্বর্তী সরকার বার বারই বিতর্কিত কর্মকাণ্ড করছেন বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বিতর্কিত নির্বাচন।
শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) সকালে মাগুরার শ্রীপুরে মুসলিম রেনেসাঁর কবি ফররুখ আহমেদের গ্রামের বাড়ি পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের তিনি জানিয়েছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য থাকলেও আগামী বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
তিনি আরও বলেছেন, “নির্বাচনের সময় পেছানোর কোনো সম্ভাবনা নেই। নির্বাচন ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই হবে। এটা আমাদের অন্তর্বর্তী সরকারের একটি কমিটমেন্ট। কেউ যদি মনে করেন যে এটা বানচালের চেষ্টা করবেন তাহলে সেটা সম্ভব নয়।”
এদিকে নির্বাচন নিয়ে দীর্ঘদিন থেকেই বিএনপি নানামুখী আলোচনা করে যাচ্ছে। দলটির এ আলোচনার মধ্যেই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস গত ১৬ ডিসেম্বর জাতির উদ্দেশে তার ভাষণে নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা করেছেন। গত ১৭ ডিসম্বের সন্ধ্যায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সমসাময়িক ইস্যু নিয়ে কথা বলার সময় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, নির্বাচন নিয়ে খুব স্পষ্ট রোডম্যাপ দেওয়া হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আলোকপাত করেছেন ২০২৫ এর ডিসেম্বর বা ২০২৬ এর ৩০ জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, বাংলাদেশের বড় দুইটি রাজনৈতিক দল হচ্ছে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি। এবারের নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করছে- এটা যেমন নিশ্চিত হয়েছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ অন্যতম একটি বড় দল হওয়া সত্ত্বেও - এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ অনেকটাই অনিশ্চিত। এই নিয়ে রাজনৈতিক মহলেও চলছে নানা আলোচনা, সমালোচনা।
আসন্ন নির্বাচনে অন্যান্য দল অংশ নিতে পারলেও আওয়ামী লীগের জন্য সেটা সম্ভব হবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠেছে বেশ জোরেসোরেই। গত ১৯ ডিসেম্বর, বৃহস্পতিবার রংপুরে এক অনুষ্ঠানে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার জানান, এ মুহূর্তে আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশ নিতে তিনি কোনো বাধা দেখছেন না। তার এ বক্তব্যের পর তা প্রত্যাখ্যান করে ওই রাতেই বিবৃতি দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
২১ ডিসেম্বর, শনিবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহবায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বিবিসি বাংলাকে বলেন, “গণহত্যায় জড়িত আওয়ামী লীগের বিচার হতে হবে; তার আগে আওয়ামী লীগের নির্বাচনের প্রশ্নই অপ্রাসঙ্গিক।”
এসব বিষয় নিয়েই অনেকটা তালগোল পাকানো অবস্থায় আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন। একাধিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলছেন, ভোটের মাঠে আওয়ামী লীগের কোনো বিকল্প হয় না। বাংলাদেশে স্বাধীনতার আগে থেকেই আওয়ামী লীগের একটি ভোট ব্যাংক রয়েছে, যা মোটামোটি ৩০ শতাংশের মতো। যদি আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ না নেয়, তবে এই ৩০ শতাংশ ভোটার ভোটকেন্দ্রেই যাবে না। তবে এই নির্বাচন হবে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বিতর্কিত একটি নির্বাচন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকার এবং বিগত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের সময়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেই নির্বাচনে অংশ নেয়নি বিএনপি-জামায়াত। তথাপিও সেই নির্বাচন আন্তর্জাতিক মহলে গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেছিল। কিন্তু এক বছরের মাথায় সেই সরকারকে ক্ষমতা ছাড়তে হয়েছে। ঠিক এই সময়ে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠান করলে নির্বাচন কতটুকু গ্রহণযোগ্য হবে সেটি যেমন প্রশ্ন, তার পরও বড় প্রশ্ন হচ্ছে এই নির্বাচনে নির্বাচিত সরকার কতদিন টিকে থাকতে পারবে?