বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটি আজকাল এক অভিনব অর্থনৈতিক কৌশলের পথে যাত্রা শুরু করিয়াছে। সরকারের আয় ক্রমাগত হ্রাস পাইতেছে এ কথা বলিলে অবিচার হইবে না। কমিবেই বা না কেন? একে একে বন্ধ হইতেছে কলকারখানা, রপ্তানি খাত হইতে বিদায় লইতেছে পণ্য, গার্মেন্টস ব্যতীত দেশ অচল আর রেমিট্যান্স আক্রান্ত স্থবির বৈদেশিক আয়। শ্রমবাজার একে একে বন্ধ হইতেছে, বিদেশে কর্মী পাঠানো এখন যেন বিলুপ্তপ্রায় শিল্প।
ইহা হইতে উত্তরণের পথ খুঁজিতে সরকার এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিয়াছে- মেট্রোরেল দর্শন ফি! হ্যাঁ, ঠিকই শুনিয়াছেন। শেখ হাসিনার নির্মিত মেট্রোরেলে চড়িতে না চাইলেও, কেবল দেখিবার জন্যই এখন গুনিতে হইবে ১০০ টাকা। আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন বলিয়া কথা!
এই সিদ্ধান্তে উদ্বুদ্ধ হইয়া আমরা প্রস্তাব রাখি পদ্মা সেতুর নিচে দাঁড়াইয়া তাহা দেখিবার জন্য ফি নির্ধারণ করা হউক। সেতুতে উঠিলে তো টোল দিতে হয় কিন্তু নিচে দাঁড়াইয়া ‘সেলফি’ তুলিবার সুযোগও তো একপ্রকার বিলাসিতা। অতএব ‘ভিউ ফি’ ৫০ টাকা ধার্য করা যাইতে পারে।
আর শাহজালাল বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল? যেহেতু বিদেশে আর কর্মী যাইবে না, এত বড় টার্মিনালের প্রয়োজন কী? অতএব, তাহাকে ‘প্রেমকুঞ্জ’ ঘোষণা করা হউক। হালাল প্রেমের জন্য টিকিট কাটিয়া প্রবেশ, ভেতরে বসিবার জন্য ‘রানওয়ে রোমান্স বেঞ্চ’ আর মাঝে মাঝে ‘লাভ ইন দ্য লাউঞ্জ’ শীর্ষক নাট্য প্রদর্শনী।
এক্সপ্রেসওয়েতে ‘নিড ফর স্পিড’ অনুপ্রাণিত মোটর রেইসিং আয়োজন করা যাইতে পারে। নাম দেওয়া যাইতে পারে “জাতীয় গতি উৎসব”। প্রতিযোগীরা হইবেন সাবেক আমলা, বর্তমান উপদেষ্টা ও সম্ভাব্য প্রার্থী। ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট হইতে আয় হইবে কোটি কোটি টাকা।
উপদেষ্টাদের লইয়া ‘রম্য রিয়েলিটি শো’ চালু করা হউক। একেকজন একেক পোস্ট দিবেন, বাকিরা তাহা লইয়া শুদ্ধ-অশুদ্ধ আলোচনা করিবেন। বিচারক হইবেন বিদেশী কূটনিতিকরা। দর্শক ভোটে বিজয়ী উপদেষ্টাকে দেওয়া হইবে ‘গভর্নেন্স গুরু’ খেতাব।
ইনডোর স্টেডিয়ামে সমন্বয়কদের লইয়া ‘ডব্লিউ ডব্লিউ এফ’ স্টাইলে মারামারির আয়োজন করা যাইতে পারে। এক পক্ষ বলিবে, “আমরাই প্রকৃত সমন্বয়কারী”, অপর পক্ষ বলিবে, “তোমরা তো জা শি!” দর্শক টিকিট কাটিয়া ঢুকিবেন, চিয়ার করিবেন আর সরকার আয় করিবে।
সবচেয়ে আকর্ষণীয় হইবে ‘বেয়াক্কেল চ্যালেঞ্জ’। প্রখ্যাত ওয়ায়েজদের লইয়া কৌতুক প্রতিযোগিতা। কে কতটা হাসাইতে পারেন, কে কতটা নাটকীয় ভঙ্গিতে ‘উহুঁ মুরুব্বী’ বলিতে পারেন, তাহাই হইবে বিচার্য। বিজয়ী পাবেন ‘মাওলানা মিরাক্কেল’ পুরস্কার।
এইসব উদ্যোগের মাধ্যমে বাংলাদেশ অচিরেই মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরকে ছাড়াইয়া আমেরিকা হইয়া উঠিবে। মানুষ আর ভাত-ডাল খাইবে না, সকলে চিকেন ফ্রাই খাইবে, কোক খাইবে আর ইউনূসের গান গাইবে “আমার নোবেল মামা, আমি তোমায় ভালোবাসি!”
অতএব, বলিতে হয় সরকারের আয় কমিতেছে ঠিকই, কিন্তু তাহা পূরণ করিবার জন্য যে সৃজনশীলতা ও কল্পনাশক্তির প্রয়োগ হইতেছে, তাহা সত্যই প্রশংসনীয়। এই ব্যতিক্রমী চিন্তাধারায় দেশ একদিন ‘উন্নয়নের মহাসড়ক’ পেরাইয়া ‘উন্নাসিকতার মহাকাশে’ পৌঁছাইবে এই আশায় থাকিলাম।
লেখক: এক ক্লান্ত পেনসিল, রম্যের কশাঘাতে জর্জরিত অর্ধমৃত হয়ে বেঁচে থাকা