বাংলাদেশের উন্নয়নের চাবিকাঠি যে চট্টগ্রাম বন্দরের গোপন গুদামে লুকায়িত ছিল, তাহা আমরা এতকাল জানিতাম না। সম্প্রতি সেই গুদামের তালা খুলিয়া দেখা গেল—আয় আছে, কিন্তু ব্যয়ও আছে; আর আছে অব্যবস্থাপনার মহোৎসব। অতঃপর, আমাদের প্রাজ্ঞ নীতিনির্ধারকেরা ভাবিলেন, “দেশি দিয়ে আর কুলাবে না, বিদেশী চাই!”
এই মহৎ সিদ্ধান্তে চট্টগ্রাম বন্দরের দায়িত্ব বিদেশীদের হাতে হস্তান্তরিত হইতে চলেছে। শুনিয়া জনতা উল্লসিত, আমলা উদ্বিগ্ন, আর অটো রিক্সা চালকেরা নিঃশব্দে গ্যাস ছাড়িয়া দিল। কারণ, পরবর্তী পদক্ষেপে বিদেশীদের নিয়োগ দেওয়া হইবে যানবাহন নিয়ন্ত্রণে। বিশেষত, অটো রিক্সা নামক তিনচাকার ত্রাসকে নিয়ন্ত্রণ করিতে পারিবে একমাত্র সুইডেনের স্নায়ুবিজ্ঞানী অথবা জাপানের রোবোটিক পুলিশ।
ইলিশ মাছের মূল্য নিয়ন্ত্রণে ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ, মসজিদে জুতা চুরি রোধে জার্মান গোয়েন্দা, ক্রিকেট পিচের পাশে পালং শাকের চাষে ডাচ কৃষিবিদ, থানায় পুলিশকে যোগব্যায়াম শেখাতে ভারতীয় গুরু, এবং তৌহিদী জনতাকে ডিভি লটারির আবেদনপত্র পূরণে সহায়তা করিতে আমেরিকান ইমিগ্রেশন পরামর্শক—এই সকল বিদেশী প্রতিভা আমাদের জাতীয় জীবনে নবজাগরণ আনিবে।
নারীদের জন্য ইলেকট্রিক বোরাকা তৈরির প্রশিক্ষণ দিবে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রযুক্তিবিদ, আর ছিনতাইকারীদের জন্য থাকিবে সুইস কারিগরি প্রশিক্ষণ—যাহাতে তারা ছিনতাই করিয়া শুধু মোবাইল নয়, মোবাইলের ব্যাকআপও নিতে পারে। গুপ্ত বাহিনীকে সুপ্ত রাখিবার জন্য রসময় গুপ্তের জীবনী পাঠ্য করা হইবে, এবং খণ্ডকালীন প্রশিক্ষক হইবে হাঙ্গেরির ইতিহাসবিদ।
এই সকল বিদেশী বুদ্ধির সংমিশ্রণে বাংলাদেশ অচিরেই পরিণত হইবে এক আধুনিক, পালংবাদসমৃদ্ধ, সুজলা-সুফলা-শস্য-শ্যামলা রাষ্ট্রে। যেখানে ট্রাফিক জ্যাম থাকিবে না, জুতা হারাইবে না, মাছের দাম শুনিয়া হৃদরোগ হইবে না, এবং ছিনতাইকারীরা ছিনতাই করিয়া রসিদ দিবে।
তবে, এই উন্নয়নের পথে একমাত্র বাধা হইতে পারে আমাদের জাতীয় অভ্যাস—“সব জানি, কিছু মানি না।” অতএব, বিদেশীদের সঙ্গে সঙ্গে কিছু দেশীয় ‘মনোবিদ’ নিয়োগ দেওয়া আবশ্যক, যাহারা জনগণকে বুঝাইবে, “বিদেশী মানেই উন্নয়ন, দেশি মানেই দুঃখ।”
শেষে বলি, যদি এই পরিকল্পনা সফল হয়, তবে পরবর্তী পদক্ষেপে সংসদেও বিদেশী নিয়োগ দেওয়া হইবে। তাহা হইলে বাজেট বক্তৃতায় থাকিবে ব্রিটিশ উচ্চারণ, আর বিরোধী দলের হট্টগোলে থাকিবে ইতালিয়ান আবেগ। তখনই বুঝিব, বাংলাদেশ সত্যিই অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকার পর্যায়ে উঠিয়া গেছে—তবে পালং শাকের পাতায়।
লেখক: এক ক্লান্ত পেনসিল, যা তাহার রসময় সময়কে মজাদার করিয়া লিপিবদ্ধ করিয়া রাখে