সর্বশেষ

ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসব ২০২৫

গ্ল্যামার, প্রতিবাদ ও শিল্পভাবনার অনন্য সম্মিলন

বিনোদন ডেস্ক বিডি ভয়েস
প্রকাশিত: ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০০:৫৮
গ্ল্যামার, প্রতিবাদ ও শিল্পভাবনার অনন্য সম্মিলন

ইতালির লিডো দ্বীপে ২৭ আগস্ট থেকে ৬ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হলো ৮২তম ভেনিস আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব। ইউরোপের প্রাচীনতম এই চলচ্চিত্র আসর এবারও হয়ে উঠেছিল বিশ্ব সিনেমার আঙ্গিনায় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।


এবারের আসরে সেরা চলচ্চিত্রের ‘গোল্ডেন লায়ন’ জিতেছেন খ্যাতনামা মার্কিন পরিচালক জিম জারমুশ। তাঁর চলচ্চিত্র ‘ফাদার মাদার সিস্টার ব্রাদার’—এক নীরব অথচ গভীর মানবিক গল্প, যেখানে পরিবার, বিচ্ছিন্নতা ও পুনর্মিলনের সূক্ষ্ম টানাপোড়েন কাব্যিক ভঙ্গিতে উঠে এসেছে।

 

‘গোল্ডেন লায়ন’ হাতে মার্কিন পরিচালক জিম জারমুশ


উৎসবের উদ্বোধনী ছবি ছিল ইতালির পাওলো সোরেন্তিনোর ‘লা গ্রাজিয়া’ এবং সমাপনী ছবি ফরাসি নির্মাতা  সেদ্রিক জিমেনেজ এর- ‘ডগ ৫১’। এবারের উৎসবের প্রধান বিচারকের দায়িত্ব পালন করেছেন মার্কিন চলচ্চিত্র নির্মাতা আলেকজান্ডার পেইন।
 

অভিনয়ে সর্বোচ্চ মর্যাদাপূর্ণ ‘ভোলপি কাপ’ পেয়েছেন ইতালির টনি সারভিল্লো (লা গ্রাজিয়া) এবং চীনের শিন ঝিলেই (দ্য সান রাইজেস অন আস অল)। শ্রেষ্ঠ পরিচালক নির্বাচিত হয়েছেন মার্কিন নির্মাতা বেনি সাফদি (দ্য স্ম্যাশিং মেশিন)। শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যের পুরস্কার পেয়েছেন ফরাসি নির্মাতা ভ্যালেরি দঁজেলি ও জিল মারশাঁ (অ্যা ট ওয়ার্ক)।

বিশেষ জুরি পুরস্কার জিতেছে জিয়ানফ্রাঙ্কো রোসির প্রামাণ্যচিত্র ‘বিলো দ্য ক্লাউডস’। নবীন অভিনয়শিল্পীদের জন্য প্রদত্ত ‘মারচেলো মাস্ত্রোয়ানি পুরস্কার’ পেয়েছেন সুইস অভিনেত্রী লুনা ভেডলার (সাইলেন্ট ফ্রেন্ড)।
 

গোল্ডেন লায়ন জয়ী ‘ফাদার মাদার সিস্টার ব্রাদার’ চলচ্চিত্রের একটি দৃশ্য

 

চলচ্চিত্রপ্রেমীদের সবচেয়ে আলোড়িত করেছে কাওথের বেন হানিয়ার ‘দ্য ভয়েস অব হিন্দ রজাব’। ফিলিস্তিনের গাজায় এক শিশুর করুণ মৃত্যুকে ঘিরে নির্মিত এই চলচ্চিত্র প্রদর্শনের পর দর্শক দাঁড়িয়ে ২২ মিনিট ধরে অভিবাদন জানায়—যা উৎসবের ইতিহাসে অন্যতম দীর্ঘতম। প্রদর্শনীতে “ফ্রি প্যালেস্টাইন” স্লোগান ধ্বনিত হয়, যা মানবাধিকার ও রাজনৈতিক প্রতিবাদের শক্তিশালী প্রতীক হয়ে ওঠে।
 

আজীবন সম্মাননার ‘গোল্ডেন লায়ন’ পেয়েছেন কিংবদন্তি জার্মান চলচ্চিত্র নির্মাতা ওয়ার্নার হার্জগ এবং আমেরিকান অভিনেত্রী কিম নোভাক। অন্যদিকে ভারতীয় পরিচালক অনুপর্ণা রায় ইতিহাস গড়েছেন; তিনি ‘সংস অব ফরগটেন ট্রিজ’ ছবির জন্য ‘অরিজন্টি’ বিভাগে শ্রেষ্ঠ পরিচালক হয়েছেন। পুরস্কারটি তাঁকে প্রদান করেন ফরাসি নির্মাতা জুলিয়া ডুকুরনো, যিনি এ বিভাগের বিচারক মণ্ডলীর সভাপতি ছিলেন।
 

উৎসব ভেন্যুর বাইরে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা চেয়ে প্ল্যাকার্ড হাতে প্রতিবাদ

 

দীর্ঘ অভিবাদন পেয়েছে আরও কিছু চলচ্চিত্র—দ্য টেস্টামেন্ট অব অ্যান লি, গিয়ের্মো দেল তোরোর ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইন, দ্য স্ম্যাশিং মেশিন এবং জুলিয়া রবার্টস অভিনীত আফটার দ্য হান্ট। শিল্পভাবনা, আবেগ ও রাজনৈতিক বার্তার সংমিশ্রণে এই ছবিগুলো দর্শকের হৃদয় ছুঁয়ে গেছে।


শুধু চলচ্চিত্র নয়, উৎসব ছিল তারকাখচিত লালগালিচারও এক অনন্য আসর। জুলিয়া রবার্টস, কেট ব্লাঞ্চেট, এমা স্টোন, জর্জ ও আমাল ক্লুনি প্রমুখ তারকার উপস্থিতিতে ভেনিসের রাতগুলো হয়ে উঠেছিল আলোকোজ্জ্বল।
 

সব মিলিয়ে এবারের ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসব ২০২৫ কেবল পুরস্কার ও তারকাদের প্রদর্শনী ছিল না; এটি হয়ে উঠেছিল মানবিক বেদনা, রাজনৈতিক প্রতিবাদ, দর্শক-প্রতিক্রিয়া ও শিল্পভাবনার এক অনন্য মেলবন্ধন। সোরেন্তিনোর লা গ্রাজিয়া-তে টনি সারভিল্লোর অভিনয় কিংবা শিন ঝিলেইয়ের আবেগঘন উপস্থিতি—সবকিছু মিলিয়ে এবারের আয়োজন বিশ্ব সিনেমার ইতিহাসে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

সব খবর