নব্বই দশকে রুপালি পর্দায় ঝলমলে উপস্থিতি রেখে যাওয়া চিত্রনায়িকা শাহিনা শিকদার বনশ্রী মারা গেছেন একাকিত্ব ও মানবেতর কষ্টে। মঙ্গলবার ভোর ৫টায় মাদারীপুরের শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৫৫ বছর।
১৯৭৪ সালের ২৩ আগস্ট মাদবরের চর ইউনিয়নের শিকদারকান্দি গ্রামে জন্ম নেওয়া বনশ্রী সাত বছর বয়সে পরিবারের সঙ্গে ঢাকায় চলে যান। ১৯৯৪ সালে মমতাজ আলীর পরিচালনায় ‘সোহরাব রুস্তম’ সিনেমার মাধ্যমে চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে তার। ইলিয়াস কাঞ্চনের বিপরীতে অভিনীত ছবিটি ব্যবসাসফল হয়। এরপর মান্না, আমিন খান, রুবেলসহ একাধিক নায়কের বিপরীতে অভিনয় করেন তিনি। ‘নেশা’, ‘মহাভূমিকম্প’, ‘প্রেম বিসর্জন’, ‘ভাগ্যের পরিহাস’—এমন বেশ কয়েকটি ছবিতে তার অভিনয় প্রশংসিত হয়।
তারকাখ্যাতি ও সাফল্যের সেই দিনগুলো বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। অসুস্থতা ও আর্থিক সংকটে চলচ্চিত্র থেকে ছিটকে পড়েন বনশ্রী। জীবনের কঠিন সময়গুলোতে তাকে দেখা গেছে বস্তিতে, শাহবাগে ফুল বিক্রেতা হিসেবে, এমনকি বাসে হকারি করতেও। একমাত্র মেয়েকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগও করেছিলেন তিনি, কিন্তু থানায় অভিযোগ করেও মেয়েকে ফিরে পাননি।
শেষ বয়সে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস ও শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। প্রায় অন্ধ হয়ে পড়া বনশ্রী চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন গ্রামে ভিক্ষা করে ওষুধ সংগ্রহ করতেন। আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি ছোট ঘরে ছেলে রোমিওকে নিয়ে বসবাস করলেও অভিযোগ রয়েছে, ছেলে তার খোঁজখবর রাখতেন না। রান্না করতে না পারায় প্রতিবেশীদের কাছে খাবার চাইতে হতো।
প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পাওয়া ২০ লাখ টাকার অনুদানের সুদ দিয়ে চলত তার সংসার, কিন্তু সেটিও পর্যাপ্ত ছিল না। মৃত্যুর আগে চলচ্চিত্র অঙ্গনের সহায়তা চাইলেও তেমন সাড়া পাননি।
একসময় লাখো দর্শকের প্রিয় এই অভিনেত্রীর জীবনের শেষ অধ্যায় কেটেছে নিঃসঙ্গতা ও অবহেলায়। বনশ্রীর করুণ পরিণতি শুধু সিনেমাপ্রেমীদের নয়, পুরো সংস্কৃতি অঙ্গনের জন্যই এক গভীর বেদনার প্রতিচ্ছবি।