সর্বশেষ

বন্ধ হলো বগুড়ার ‘মধুবন সিনেপ্লেক্স’; নির্বাচনের পর আবার খোলার সম্ভাবনা

বিনোদন ডেস্ক বিডি ভয়েস
প্রকাশিত: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৫:০৭
বন্ধ হলো বগুড়ার ‘মধুবন সিনেপ্লেক্স’; নির্বাচনের পর আবার খোলার সম্ভাবনা
মধুবন সিনেপ্লেক্স

দর্শক সংকট ও লোকসানের কারণে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী ‘মধুবন সিনেপ্লেক্স’। শনিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে হলটির মালিক আর এম ইউনুস রুবেল এ ঘোষণা দেন। তিনি জানান, নির্বাচিত সরকার না আসা পর্যন্ত সিনেপ্লেক্স চালু হবে না। ভবিষ্যতে বিদেশি সিনেমা আমদানির সুযোগ পেলে আবারও চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে।

 

বগুড়ায় একসময় ৩৮টি সিনেমা হল থাকলেও বর্তমানে টিকে আছে মাত্র সাতটি। শহরে একসময় ১০টি প্রেক্ষাগৃহ থাকলেও এখন চালু রয়েছে শুধু মধুবন সিনেপ্লেক্স ও সোনিয়া হল। একে একে বন্ধ হয়ে গেছে মাধু, মেট্রো, মেরিনা, উত্তরা, বীথি, সেনা অডিটরিয়াম, উল্লাস, মাসুম ও বনানী সিনেমা হল। অনেক হল ভেঙে গড়ে উঠেছে শপিং সেন্টার, আবার কিছু জায়গা দখল হয়ে গেছে রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের হাতে।

 

মধুবন সিনেপ্লেক্সের মালিক জানান, প্রতি মাসে কর্মচারীদের বেতন, বিদ্যুৎ বিল ও রক্ষণাবেক্ষণে খরচ হয় প্রায় দুই লাখ টাকা। ঈদুল আজহায় শাকিব খান অভিনীত ‘তাণ্ডব’ সিনেমার পর ভালো ছবি না থাকায় দর্শক কমে যায়। বিদ্যুৎ বিল বকেয়া, ঋণ করে বেতন পরিশোধ—সব মিলিয়ে মাসের পর মাস লোকসান গুনতে হয়েছে। ফলে বাধ্য হয়ে বন্ধের সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।

 

২০২১ সালের ১৫ অক্টোবর ‘বাজি’ সিনেমা দিয়ে নতুন আঙ্গিকে যাত্রা শুরু করে মধুবন সিনেপ্লেক্স। ৩৩৬ আসনের এই আধুনিক প্রেক্ষাগৃহে ‘পরাণ’, ‘হাওয়া’, ‘প্রিয়তমা’, ‘তুফান’, ‘রাজকুমার’, ‘বরবাদ’, ‘জওয়ান’ ও ‘পাঠান’-এর মতো সিনেমা ব্যবসাসফল হয়। ‘তাণ্ডব’ প্রদর্শনের সময় দর্শক সামাল দিতে মধ্যরাতেও শো চালাতে হয়েছিল। কিন্তু এরপর ভালো ছবি না আসায় দর্শক কমে যায়।

 

হলটির ইতিহাসও সমৃদ্ধ। ১৯৭৪ সালে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর সাবেক লেফটেন্যান্ট এ এম ইউনুস চেলোপাড়ায় ২৪ শতক জমিতে মধুবন সিনেমা হল প্রতিষ্ঠা করেন। ‘ডাকু মনসুর’ দিয়ে যাত্রা শুরু করা এই হলে একসময় হাউসফুল চলেছে ‘পৃথিবী আমারে চায়’, ‘গোপী গাইন বাঘা বাইন’, ‘সূর্যকন্যা’, ‘সীমানা পেরিয়ে’, ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’, ‘সুজন সখী’সহ বহু জনপ্রিয় সিনেমা।

 

আর এম ইউনুস রুবেল জানান, পৈতৃক সম্পত্তি বিক্রি করে প্রায় চার কোটি টাকা ব্যয়ে আধুনিক মধুবন সিনেপ্লেক্স গড়ে তোলা হয়। দূর-দূরান্ত থেকে দর্শকরা পরিবারসহ সিনেমা দেখতে আসতেন। কিন্তু মানসম্পন্ন দেশি সিনেমার অভাব, বিদেশি সিনেমা আমদানির জটিলতা এবং সরকারি সহযোগিতার অভাবে হল চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে।

 

তিনি বলেন, “চলতি সপ্তাহে ‘নন্দিনী’ সিনেমা চলছিল, কিন্তু দর্শক না থাকায় খরচই ওঠেনি। সরকারের উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করতে চেয়েও ব্যর্থ হয়েছি।”

 

পরিশেষে তিনি সিনেমা শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে কার্যকর নীতিমালা ও সরকারি সহায়তার আহ্বান জানান। তাঁর আশা, একদিন আবারও মধুবন সিনেপ্লেক্স আলোর ঝলকানিতে দর্শকদের স্বাগত জানাবে।

সব খবর