সর্বশেষ

একের পর এক কনসার্ট বাতিল

সাংস্কৃতিক সংকট নাকি নিরাপত্তা ব্যর্থতা?

বিনোদন ডেস্ক বিডি ভয়েস
প্রকাশিত: ১২ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৪:২৯
সাংস্কৃতিক সংকট নাকি নিরাপত্তা ব্যর্থতা?

বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গন দীর্ঘদিন ধরে তরুণদের মেধা বিকাশ, সৃজনশীলতা ও সামাজিক সম্প্রীতির অন্যতম ক্ষেত্র হিসেবে কাজ করে আসছে। সংগীত, নাটক, চলচ্চিত্র কিংবা কনসার্ট—সবই তরুণদের মানসিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে একের পর এক কনসার্ট বাতিল হওয়া শুধু বিনোদনের ঘাটতি নয়, বরং একটি গভীর সংকটের ইঙ্গিত বহন করছে।

 

বিডিনিউজ২৪-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকায় আয়োজিত একটি বহুল প্রতীক্ষিত কনসার্ট শেষ মুহূর্তে বাতিল হয়, যা দর্শকদের মধ্যে তীব্র হতাশা সৃষ্টি করে। সময় নিউজ জানিয়েছে, বিদেশি শিল্পীদের অংশগ্রহণে একটি আন্তর্জাতিক মানের কনসার্ট অনুমতি ও নিরাপত্তাজনিত কারণে বাতিল করা হয়। চ্যানেল আই অনলাইন উল্লেখ করেছে, যুক্তরাষ্ট্রেও একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে—প্রযুক্তিগত ও নিরাপত্তাজনিত সমস্যার কারণে শেষ মুহূর্তে কনসার্ট বাতিল হয়। অন্যদিকে জাগো নিউজ জানিয়েছে, ঢাকায় আয়োজিত একটি বড় কনসার্টে শিল্পীদের উপস্থিতি নিশ্চিত থাকলেও আয়োজক প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ সমস্যার কারণে অনুষ্ঠানটি বাতিল হয়।

 

কর্তৃপক্ষের দাবি, নিরাপত্তা ও অনুমতির বিষয়টি নিশ্চিত না হলে বড় আয়োজন করা সম্ভব নয়। আয়োজকরা বলছেন, বিদেশি শিল্পীদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠান করতে হলে বহুমাত্রিক অনুমতি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রয়োজন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে অনুমতি না মেলায় কিংবা নিরাপত্তা ঝুঁকি দেখা দেওয়ায় অনুষ্ঠান বাতিল করতে হয়েছে। এতে আয়োজকরা যেমন আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন, তেমনি দর্শকরাও ক্ষুব্ধ হয়েছেন।  

 

কনসার্ট তরুণদের কাছে শুধু বিনোদন নয়, বরং সামাজিকীকরণ ও সাংস্কৃতিক চর্চার একটি বড় ক্ষেত্র। তারা এখানে নিজেদের প্রকাশ করে, নতুন চিন্তা ও সৃজনশীলতার সঙ্গে পরিচিত হয়। একের পর এক কনসার্ট বাতিল হওয়া তরুণদের মধ্যে হতাশা তৈরি করছে। অনেকেই মনে করছেন, উগ্রবাদী শক্তি সংস্কৃতির বিপক্ষে দাঁড়িয়ে এ ধরনের আয়োজনকে বাধাগ্রস্ত করছে। ফলে তরুণদের সাংস্কৃতিক বিকাশ ব্যাহত হচ্ছে।  

 

বিদেশি শিল্পীরা বাংলাদেশে এসে কনসার্ট না করে ফিরে যাওয়ার ঘটনা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নেতিবাচক বার্তা দিচ্ছে। এটি বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের দুর্বলতা ও নিরাপত্তা সংকটকে তুলে ধরছে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে এ ধরনের খবর প্রকাশিত হলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়। বিদেশি শিল্পীরা মনে করেন, বাংলাদেশে সাংস্কৃতিক আয়োজন নিরাপদ নয়। এর ফলে ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক শিল্পীদের অংশগ্রহণ কমে যেতে পারে।  

 

কনসার্ট বাতিলের ধারাবাহিকতা শুধু সাংস্কৃতিক অঙ্গনের সংকট নয়, বরং একটি সামাজিক ও রাজনৈতিক সংকটের প্রতিফলন। উগ্রবাদীরা দীর্ঘদিন ধরে সংস্কৃতির বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। তারা মনে করে, সংগীত ও সাংস্কৃতিক চর্চা তরুণদের মুক্ত চিন্তার দিকে নিয়ে যায়। তাই এ ধরনের আয়োজনকে বাধাগ্রস্ত করা তাদের কৌশল। কিন্তু রাষ্ট্র ও কর্তৃপক্ষ যদি এ বিষয়ে দৃঢ় অবস্থান না নেয়, তবে তরুণদের সাংস্কৃতিক বিকাশ ব্যাহত হবে এবং সমাজে উগ্রবাদী চিন্তার বিস্তার ঘটবে।  

 

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কনসার্ট আয়োজনের আগে নিরাপত্তা ও অনুমতির বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। আয়োজকদের পেশাদারিত্ব বাড়াতে হবে। রাষ্ট্রকে সাংস্কৃতিক চর্চার পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নিতে হবে। তরুণদের জন্য নিরাপদ সাংস্কৃতিক পরিবেশ নিশ্চিত করা জরুরি।

সব খবর